iDNA এবং বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য একটি বন ভূমিতে বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি এবং এদের জনসংখ্যা জানাটা জরুরি। এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়। বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য সরাসরি পর্যবেক্ষণ যেমন বন্যপ্রাণীটিকে দেখা, বা এর ডাক শোনা, বা পায়ের ছাপ এবং মলমূত্র ইত্যাদি দেখে এদের শনাক্ত করা হয়। এর পাশাপাশি বন-জঙ্গলে ক্যামেরা বসিয়ে আরো বিশদভাবে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ করা যায়। এ পদ্ধতিকে ক্যামেরা ট্রাপিং বলে । তবে ক্যামেরা ট্রাপিং তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং বেশ চ্যালেঞ্জিং।

বর্তমানে তুলনামূলক কম খরচে iDNA পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। iDNA (invertebrate-derived DNA) এমন একটি মলিকুলার টেকনিক যেখানে অমেরুদণ্ডী প্রাণী থেকে মেরুদন্ড বিশিষ্ট প্রাণীর ডিএনএ আলাদা করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়।


iDNA পদ্ধতি

একটি ইকোসিস্টেমে একটি জীব অন্য জীবের উপর বিভিন্ন ভাবে নির্ভরশীল। অনেক অমেরুদণ্ডী প্রাণী আছে যারা তাদের খাবারের জন্য মেরুদন্ড বিশিষ্ট প্রাণীর উপর নির্ভর করে। যেমন জোঁক মেরুদণ্ড বিশিষ্ট প্রাণীর রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। তেমনিভাবে বংশ বিস্তারের জন্য স্ত্রী মশাকে রক্ত পান করতে হয়। রক্তের সাথে হোস্টের ডিএনএ এদের শরীরে প্রবেশ করে। এ ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষা করে বন্যপ্রাণীটির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব। এছাড়া নীল মাছি পচা গলা মাংসে বা বন্যপ্রাণীর মলে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়ে সে মাংস খেয়ে বড় হয় এবং এক পর্যায়ে গিয়ে পাখা গজিয়ে পূর্ণাঙ্গ মাছিতে পরিণত হয়। এদের থেকেও বন্যপ্রাণীর ডিএনএ পাওয়া যায়। 

প্রথমে যে জায়গার বন্যপ্রাণী  পর্যবেক্ষণ করতে চাই সেখান থেকে জোঁক, মাশা, নীল মাছি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে হবে এবং ল্যাবে এনে জিনোমিক ডিএনএ আলাদা করতে হবে। জিনোমিক ডিএনএ আলাদা করার বিভিন্ন কিট এবং পদ্ধতি আছে। অতঃপর ইউনিভার্সাল প্রাইমার ইউজ করে পিসিআর (PCR) করতে হবে। পিসিআর প্রডাক্ট পিউরিফাই করে ডিএনএ সিকুয়েন্স করতে হবে এবং সিকুয়েন্স রেজাল্ট জিন ব্যাংকের নমুনার সাথে তুলনা করে বন্যপ্রাণীর পরিচয় শনাক্তকরণ সম্ভব হবে। এছাড়া উক্ত এলাকাতে নির্দিষ্ট একটি বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি জানার জন্য আমরা উক্ত প্রাণীটির জন্য বিশেষায়িত প্রাইমার ব্যবহার করে বন্যপ্রাণীটির উপস্থিতি জানতে পারি। 

ক্রমাগত শহরায়নের জন্য বন এবং জলাভূমির পরিমাণ কমতেছে। সেই সাথে কমতেছে জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যা।  এদের সংরক্ষণের জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।  


        Azizul Islam Barkat 

    Department of Zoology

    University of Dhaka. 

    ResearchGate

Comments

Popular posts from this blog

PCR কী? কেনো? কীভাবে?

সাপের বিষদাঁত কেমন হয়?