বাংলার সাপ-ব্যাঙ আলো ঝলমল !

আমরা সবাই কম-বেশী ফ্লোরিস্যান্স পদার্থের সাথে পরিচিত। এটা এমন এক বিশেষ পদার্থ, যেটা সাধারণ আলোয় দেখা যায় না। এগুলো শুধু আলট্রাভায়োলেট আলোতে দৃশ্যমান। টাকা ,পাসপোর্ট সহ বিভিন্ন জায়গায় ফ্লোরিসান্স পদার্থের ব্যবহার লক্ষনীয়। মজার বিষয় হচ্ছে প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রাণির মাঝেও  ফ্লোরিস্যান্স ধর্ম দেখা যায়। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ফ্লোরিস্যান্স কে বায়োফ্লোরিস্যান্স বলে। বায়োফ্লোরিস্যান্স অনেক সামুদ্রিক জীবের ভিতর দেখা গেলেও স্থলচর জীবের মাঝে খুব বেশী দেখা যায় না।  

       সাধারণ লাইট (বামে) ও UV লাইটে (ডানে) দৃশ্যমান সাপ। 
 

বাংলাদেশেরর তরুণ বিজ্ঞাণী দম্পতি Marjan Maria - Hassan Al-Razi সম্প্রতি একটি গবেষণা কর্ম সম্পন্ন করেছেন। গবেষণা কর্মে আরো উপস্থিত ছিলেন Sabir Bin MuzaffarAmaël Borzée তারা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে  ৩৯৫ ন্যানোমিটার আলট্রা ভায়োলেট লাইট নিয়ে রাতে জরিপ করেন এবং ৪ টি প্রাণীর মাঝে ফ্লোরিস্যান্স ধর্ম আবিষ্কার করেন। এদের মাঝে রয়েছে ১ টি ব্যাঙ (Microhyla berdmorei) , ২ টি টিকটিকি ( Hemidactylus paltyurus, Cyrtodactylus tripuraensis)  এবং ১ টি সাপ (Boiga cyanea)। এ গবেষণাটি ভবিষ্যতে প্রাণী শনাক্তকরণ, আচরণ পর্যবেক্ষণ সহ অনেক উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে। গবেষণা পত্র লিংক 

     সাধারণ লাইট (বামে) ও UV লাইটে (ডানে) দৃশ্যমান ব্যাঙ।


একটু ভিন্ন আলাপ করি। আপনারা যারা জেনেটিক্স নিয়ে পড়ালেখা করেন বা এ ফিল্ডের খোঁজ খবর রাখেন তারা GFP (green florescence protein) সম্পর্কে জেনে থাকবেন। এটা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ মার্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একটু বুঝিয়ে বলি। আপনার প্রয়োজনীয় ডিএনএ বা জিন ব্যক্টেরিয়া বা অন্য কোন বাহকে নিয়ে রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ তৈরী করলেন। আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার প্রয়োজনীয় ডিএনএ বা জিন আপনার বাহকে সেট হয়েছে কিনা? এটা বোঝার জন্য বিভিন্ন মার্কার ব্যবহৃত হয়। GFP এরকম একটা মার্কার। আপনার প্রয়োজনীয় ডিএনএ বা জিনে GFP উৎপাদনকারী বেজ পেয়ার সিকুয়েন্স পূর্বেই লাগানো হয়। রিকম্বিনেশের পর বাহক যদি GFP তৈরী করে তাহলে বোঝা যাবে প্রয়জনীয়  ডিএনএ বা জিন  ব্যক্টেরিয়া বা বাহকে রিকম্বিনেট করেছে। এ বাহক রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ তে বিদ্যমান GFP উৎপাদনকারী বেজ পেয়ার সিকুয়েন্স থাকায় এটি GFP তৈরী করে। আলট্রা  ভায়োলেট আলোতে এ বাহককে সবুজ দেখাবে। তবে দৃশ্যমান আলোয় এটা বোঝা যাবে না। GFP প্রকৃতিতে Aequorea victoria  নামক জেলিফিশে পাওয়া যায়। বিজ্ঞাণী Roger Yonchien Tsien ২০০৮ সালে এ GFP সম্পর্কিত গবেষণার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান।   

সাধারণ লাইট (বামে) ও UV লাইটে (ডানে) দৃশ্যমান টিকটিকি।

আমরা আশা করতেই পারি আমদের দেশেও এক সময় এরকম দারুণ উদ্ভাবনী কাজ হবে। Marjan Maria ও তার দলের উক্ত গবেষণা এর প্রারম্ভিক প্রান্ত। 



Azizul Islam Barkat

Department of Zoology

University of Dhaka. 

ResearchGate

Comments

Popular posts from this blog

PCR কী? কেনো? কীভাবে?

সাপের বিষদাঁত কেমন হয়?

iDNA এবং বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ